ভারতে বাংলাদেশবিরোধী উস্কানি চলছেই
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের একটা অপ্রত্যাশিত-অনাকাক্সিক্ষত রশি টানাটানি চলছে। ভারতে আশ্রয় গ্রহণের শুরু থেকে শেখ হাসিনা সেখানে বসে রাজনৈতিক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়াকে ভালোভাবে গ্রহণ না করার বার্তা দিল্লিকে দেয়া হলেও দিল্লির তরফ থেকে বিষয়টি অগ্রাহ্য ভাবই পরিলক্ষিত হয়েছে। উপরন্তু ভারতের কিছু মূলধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অনবরত বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা প্রচার-প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। প্রথম দিকে শুধু মিডিয়ার উস্কানি এবং শেখ হাসিনার ফোনকল বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশে একের পর এক প্রতিবিপ্লবের নানা রকম তৎপরতা ব্যর্থ হওয়ার পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার ইস্যুতে খোদ ভারত সরকার বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো ও বাড়াবাড়ি মন্তব্য করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে তার সরকারের সাথে কাজ করার যে বার্তা শুরুতেই দিল্লি দিয়েছিল, তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। যতই দিন যাচ্ছে বৈপরীত্য ততই প্রকটআকারে ধরা পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারির উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে পাল্টা জবাব আসা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সাথে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশের সম্পর্ক ও পারস্পরিক লেনদেন-বোঝাপাড়ার কথা বলেছে। সম্ভবত এটাই ভারত মেনে নিতে পারছে না। সে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মতো চিরস্থায়ীভাবে একটি নতজানু বশংবদ সরকার চায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশ ভারতের সাথে সমতা ভিত্তিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। ভারত-বাংলাদেশ বৈরী সম্পর্কে কারোই লাভ নেই। এটা ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই সীমান্তের দুই প্রান্তে চরম উত্তেজনা ও বাদানুবাদের মধ্যেও দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল বা স্থগিত হয়নি। গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় আসেন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দীনের সাথে বৈঠকে বসেন বিক্রম মিশ্রি তথাকথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেও তার কাছ থেকে সম্পর্কের ইতিবাচক উত্তরণের বার্তা পাওয়া গিয়েছিল। অন্যদিকে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য, কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলা ও উস্কানির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ। বিক্রম মিশ্রি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার সাথেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি গণমাধ্যমের কাছে লিখিত বক্তব্যে দু’ দেশের মধ্যে জনকেন্দ্রিক, জনমুখী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছিলেন। বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় অবস্থানকালেই কলকাতা এবং দিল্লিতে বাংলাদেশবিরোধী চাপান-উতোর চলছিল। বিজেপির বিভিন্ন সংগঠনের বাংলাদেশ সীমান্তে লংমার্চ, কলকাতা ও আগরতলায় হাইকমিশন অফিসে হামলা, পতাকা অবমাননাসহ তাদের ধারাবাহিক অপতৎপরতার জবাবে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির তিনটি অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে আগরতলামুখী যে লং মার্চের ডাক দেয়া হয়েছিল লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
দিল্লিতে ফিরে গিয়ে বিক্রম মিশ্রি সংসদীয় কমিটির কাছে বাংলাদেশ সফর নিয়ে যে ব্রিফ করেছেন, তা ইতিবাচক। তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর কথিত হামলার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস এবং দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা যেসব বক্তব্য ছড়াচ্ছেন তা দিল্লি সমর্থন করে না বলেও জানিয়েছেন। তিস্তার পানিচুক্তি, সীমান্তে বিএসএফ’র বাড়াবাড়ি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিগত বছরগুলোতেও ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায়নি। তবে তা নিয়ে বশংবদ হাসিনা সরকারের কোনো গরজ বা মাথাব্যথা ছিল না। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে উত্থিত নতুন বাংলাদেশ ভারতসহ প্রতিবেশীদের সাথে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। বিক্রম মিশ্রির সফর এবং পরবর্তী ব্রিফিং থেকে অনুমিত হয়, ভারত সরকারও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিনে দুই দেশের নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তেজনা বাড়ার পেছনে ভারতের দায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কোনো নিরাপত্তা হুমকি না থাকলেও তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের উস্কানিসহ নানা অপতৎপরতায় ইন্ধন দিচ্ছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পারস্পরিক অভিযোগ ও আক্ষেপের জায়গাগুলো অতিক্রম করে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করার পরও দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে আরএসএস’র পদযাত্রা, দিল্লিতে বাংলাদেশি খুঁজতে পুলিশের বিশেষ অভিযান, বাংলাদেশি নৌসীমা থেকে ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করার যেসব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে, তা খুবই গর্হিত ও লজ্জাজনক। দিল্লির মনে রাখা দরকার, তাদের যে কোনো আধিপত্যবাদী পদক্ষেপে বাংলাদেশে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এখন আর একপাক্ষিকভাবে সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব হবে না। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে পশ্চিমাবিশ্ব যখন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ভারত তখন একতরফাভাবে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন টিকিয়ে রাখতে সম্ভাব্য সবকিছু করেছিল। এখন তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ব্যর্থ করে দিতে চাইলেও দেশে এক অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য সূচিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, জাপানসহ পশ্চিমাবিশ্ব ও উন্নয়ন অংশীদাররা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বায়ণের এই যুগে কেউ যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তেমনি কেউ কারো জন্য অপরিহার্য নয়। হুমকি ও চাপ সৃষ্টির আধিপত্যবাদী নীতি দিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম